অনলাইন ডেস্ক : ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে; পশু ও আকারভেদে এবার দাম ঠিক হয়েছে গতবারের মতই।
ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনবেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়; ঢাকার বাইরে এর দাম হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।
এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় সংগ্রহ করা হবে।
রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই দাম ঘোষণা করেন।
এই দাম লবণযুক্ত চামড়ার জন্য প্রযোজ্য হবে, নাকি লবণ দেওয়ার আগে- সে বিষয়ে অনুষ্ঠানে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের টানাপড়েনের মধ্যে মন্ত্রী বিষয়টি প্রচলিত নিয়ম-পদ্ধতি ও বাজারের উপরে ছেড়ে দেন।
গত বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকায় কিনেছেন। এছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ টাকায় সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা এবার চামড়ার দাম গতবারের মতো রেখেছি। চামড়া শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পর এমনিতে মালিকরা চাপে রয়েছেন। এ কারণের ভারতে বা অন্য দেশে দাম একটু বেশি হলেও আমরা গতবারের মতো রেখেছি।”
ঢাকা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল আলম অনুষ্ঠানে বলেন, ঢাকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চামড়া স্থানান্তরে বিধি-নিষেধ রয়েছে। এর ফলে চামড়া সংরক্ষণে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
ধানমণ্ডি এলাকার দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, “এখানে কোথায় চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে? স্থানীয় অধিবাসীরা এটা করতে দেয় না। বেরাইদ, সাভারের মত উপশহরে এটা সংরক্ষণ করা হয়। তাই জেলার ভেতরে যেন চামড়া স্থানান্তর করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।”
তিনি ভারতে চামড়া পাচার ঠেকাতে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন ব্রিজ ও ফেরিঘাটে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিলে মন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ প্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে সীমান্তে অন্তত এক মাস বিশেষ নজরদারির পরামর্শ দেন তিনি।
শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বলেন, হাজারীবাগে ১৫৫টি ট্যানারি ছিল। সেগুলোর মধ্যে ৬৭টি সাভারে চালু হয়ে গেছে। এ মাসের মধ্যে ১০০ ট্যানারি চামড়া শিল্প নগরীতে চালু হয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।
সাভার চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয় না বলে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে সচিব বলেন, “আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন দুটি সিইটিপি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হয়। বাকি দুটো পরবর্তীতে চালু হবে।”
তিনি জানান, ইতোমধ্যে চামড়া শিল্প নগরীতে পানি সংযোগের ব্যবস্থা হয়েছে। আর গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে যে নীতি নেওয়া হয়েছে, তাতে আবেদন করলে তারপর সংযোগ দেওয়া হবে। সেজন্য কিছু অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। তাতে কিছুটা সময় লাগবে।
শিল্প সচিব বলেন, সাভারে যেসব আধুনিক কারিগরি বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে, তাতে একটি আধুনিক চামড়া শিল্প নগরীতে পরিণত হবে।
“এখানকার কঠিন বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। পাঁচ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ বিষয়ে আমরা ঢাকার ডিসির সঙ্গে কথা বলেছি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেরও সহযোগিতা চেয়েছি।”
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, জমির দলিল না পেলে তারা ব্যাংক ঋণ নিতে পারছেন না। এ বিষয়ে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, “আগে যে দামটা (জমির) ছিল আমরা সেটাই দিতে চাই। এখন সিইটিপির দামসহ আমাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অর্থমন্ত্রীর চিঠি আমাদের কাছে আছে; যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সিইটিপির দাম সরকার পরিশোধ করবে।”
এ সময় শিল্প সচিব বলেন, এর সুরাহা করতে হলে একনেকের অনুমতি লাগবে।
শিল্পমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন- এমন আশা প্রকাশ করে এ বিষয়ে নিজেও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তোফায়েল।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল। আর এবার দেশের খামারগুলোতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। এই হিসেবে এবার ভারত থেকে গরু না এলেও সমস্যা হবে না বলে সরকার মনে করছে।